জানুয়ারিতেই ফোরজি সেবা
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেণ মার্চে
আগামী জানুয়ারিতেই মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে ফোরজি সেবা চালু হতে যাচ্ছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোনের নম্বর অপরিবর্তিত রেখে অপারেটর বদল (এমএনপি) সেবার লাইসেন্স আজ বৃহস্পতিবার ইনফোজিলন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরিত হতে যাচ্ছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে আগামী মার্চে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেণ করা হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ। গতকাল দুপুরে বিটিআরসির সম্মেলন কেন্দ্রে টেলিকম রিপোর্টারদের সংগঠন টিআরএনবির নতুন কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময়সভায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘ফোরজি লাইসেন্স ও তরঙ্গ নিলামের সংশোধিত নীতিমালা প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দিয়েছেন। সেই নীতিমালা আজই (বুধবার) আমরা বিটিআরসির কাছে পাঠিয়ে দেব। বিটিআরসি ফোরজি চালুর বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেবে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘আগামী জানুয়ারি মাস থেকে দেশবাসী যাতে ফোরজি সেবা পায় সে বিষয়ে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। ফোরজি সেবায় প্রাথমিকভাবে ইন্টারনেটের গতি থাকবে ২০ এমবিপিএস। বিটিআরসি ভবিষ্যতে এই গতি বাড়াতে কাজ করবে।
’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল ফোন অপারেটররা আমাদের আগের নীতিমালার ২৩টির বিষয়ে সংশোধন চেয়েছিল। তার মধ্যে ২২টি সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। অন্যটির আংশিক সমাধান করা হয়েছে। এ অবস্থায় আমরা আশা করি, অপারেটররা তরঙ্গ নিলামে অংশ নেবে এবং দ্রুত ফোরজি সেবা চালু করবে। ’ তিনি আরো বলেন, আজ থেকেই আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরজি সেবা চালুর প্রক্রিয়া শুরু হলো। ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এবং জানুয়ারি থেকে এ সেবা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে যাবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ওই বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার।
মার্চে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেণ হতে পারে গতকাল দুপুরে টেলিকম রিপোর্টারদের সংগঠন টিআরএনবির নতুন কমিটির সঙ্গে মতবিনিময়সভায় বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘দেশের প্রথম যোগাযোগ ও সম্প্রচারের কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে ফ্রান্সে গিয়ে ওই স্যাটেলাইট আমি দেখে, ছুঁইয়ে এসেছি। ’
বিটিআরসির চেয়ারম্যান জানান, ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেস ফ্যাসিলিটির স্টোরে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেণ করবে স্পেসএক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। উৎক্ষেণের তারিখ চূড়ান্ত হলে সেই তারিখের এক মাস আগে সেখানে স্যাটেলাইটটি পাঠানো হবে। তিনি বলেন, ‘স্পেসএক্স-এর কথা অনুসারে আমরা আশা করছি আগামী মার্চের কোন তারিখে এই স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেণ করা হতে পারে। ’
কেন দেরি হচ্ছে—এ প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্পেসএক্স পুরনো রকেটের মাধ্যমে এটি উৎক্ষেণের প্রস্তাব দিয়েছিল। আমরা চেয়েছি নতুন রকেট। এ ছাড়া ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্যাটেলাইট উৎক্ষেণের জন্য অনেক দেশ ও প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ লাইন রয়েছে। এসব কারণে দেরি হচ্ছে। ’
সম্প্রতি ভারতের দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইটের অরবিটাল স্লট ৪৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে পরিবর্তন করে ৯৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘ওই পরিবর্তনের পরও আমাদের স্যাটেলাইটের সঙ্গে দক্ষিণ এশীয় স্যাটেলাইটের দূরত্ব থাকছে পাঁচ থেকে সাত ডিগ্রি। এতে ফ্রিকোয়েন্সিগত সমস্যা হবে বলে আপাতত মনে হচ্ছে না। তার পরও বিষয়টি নিয়ে আমাদের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। সমস্যা হলে আমরা বিষয়টি ভারতকে জানাব। ’
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সিতে ভারতীয় ওই স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি কোনো ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি করবে না—এমন শর্তেই উভয় পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়েছে।
গত এপ্রিলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম স্যাটেলাইট নির্মাণের অগ্রগতি পরিদর্শনে ফ্রান্স সফর করেন। দেশে ফিরে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, এটি উৎক্ষেণ হতে পারে আগামী ডিসেম্বরের প্রথম অথবা শেষ সপ্তাহে। আর আবহাওয়াগত কোনো সমস্যা হলে উৎক্ষেণের তারিখ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেও নির্ধারিত হতে পারে। স্যাটেলাইট বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যেতে পারবে ২০১৮ সালের জুনে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর ফ্রান্সের থালিস এলিনিয়া স্পেসের সঙ্গে বিটিআরসির বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট বিষয়ে মূল কাজ শুরুর চুক্তি সই হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিআরসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, স্যাটেলাইটের কাঠামো, উৎক্ষেণব্যবস্থা, ভূমি ও মহাকাশের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা, ভূ-স্তরে দুটি স্টেশন পরিচালনা ও ঋণের ব্যবস্থা করবে ফ্রান্সের ওই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ফ্রান্সের তুলোতে স্যাটেলাইটটির মূল কাঠামো তৈরি করা হবে। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। স্যাটেলাইটটির উৎক্ষেণের মূল কাজ ‘স্যাটেলাইট সিস্টেম’ কেনার জন্য খরচ হচ্ছে এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেণের জন্য রাশিয়ার ইন্টারস্পুিনকের কাছ থেকে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অরবিটাল স্লট কেনে বাংলাদেশ। এ জন্য খরচ হয় ২১৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। স্যাটেলাইট উৎক্ষেণে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল (এসপিআই)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি নকশা তৈরি, গ্রাউন্ড স্টেশন ব্যবস্থাপনা, বাজার মূল্যায়ন, স্যাটেলাইট বাজারজাতকরণ এবং স্থানীয় বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ…আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।