দীর্ঘ চলার পথে গৌরবের
ইতিহাস ছাত্রলীগের
বাঙালির
গৌরবের
যে
ইতিহাস
তারই
একটি
অংশ,
একটি
নাম,
একটি
কণা ‘ছাত্রলীগ’। অনেক চড়াই উৎরাই
পেরিয়ে প্রতিষ্ঠার ৭০ বছর পালন করতে
যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহি ছাত্রসংগঠনটি।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
এর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে
ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন
বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় কলম
ধরি, জঙ্গিবাদ ও মাদকমুক্ত দেশ গড়ি।’
স্লোগানে এবার পালন হবে প্রতিষ্ঠার ৭০
বছর।
দেশভাগের পর ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম
হলে যে ছাত্রসংগঠনটির জন্ম নিয়েছিল
দেখতে দেখতে ইসিহাসের নানা অংশে
প্রবেশ করে কেটে গেলো ৬৯টি বছর। গত
সাত দশতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে
দাবি আদায়ে ঝরে গেছে বহু নেতাকর্মীর
প্রাণ। অনেক নেতাকর্মীকে পঙ্গুত্ব বরণ
করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে ঘাত-
প্রতিঘাত। এতে করেও সংগঠনের প্রতি
কমেনি ভালোবাসা।
প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এর নাম ছিল ‘পূর্ব
পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ’।
পাকিস্তান আমলেই ‘মুসলিম’শব্দটি ছেঁটে
ফেলা হয়। স্বাধীনতার পর নাম হয়
‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। আগামী ৪
জানুয়ারি সংঠনের ৭০তম প্রতিষ্ঠা
বাষির্কী। আর সেই নতুন বছরে আরো নব
উদ্যমে সুন্দর আগামী গড়তে কাজ করার
দিপ্ত প্রত্যয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দীর্ঘ পথ চলার
এই ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা
এবং সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের
ইতিহাস। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রতিটি
গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব
দিয়েছে সংগঠনটি। ’৫২ এর ভাষা
আন্দোলনে, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮
এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ
গৌরব উজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। ’৬৬ এর
ছয় দফা নিয়ে ছাত্রলীগের
নেতাকর্মীরা দেশের প্রতিটি শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান, হাট-বাজার, মাঠে-ঘাটে
ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়াও শিক্ষা আন্দোলন
এবং গণঅভ্যুত্থানসহ ’৭০ এর নির্বাচন ও ’৭১
এর মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ গৌরবউজ্জ্বল
ভূমিকা লেখা থাকবে স্বর্ণাঅক্ষরে।
নব্বইয়ের দশকের স্বৈরাচারবিরোধী
আন্দোলনেও ইতিহাসের স্বাক্ষি হয়ে
অগ্রভাগে সৈনিক ছিল সেই ছাত্রলীগই।
ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন
পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া এই সংগঠনের
নেতাকর্মীরা পরে জাতীয়
রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং
এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয়
রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার
রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে
ছাত্রলীগ থেকে।
প্রতিষ্ঠালগ্নে নাইমউদ্দিন আহম্মেদকে
আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্যের একটি কমিটি
গঠন করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন
এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পরের বছর ৫
সেপ্টেম্বর আরমানিটোলায় ছাত্রলীগের
প্রথম সম্মেলনে দবিরুল ইসলাম সভাপতি ও
খালেক নেওয়াজ খান সাধারণ সম্পাদক
নির্বাচিত হন। বর্তমান সময়ে এই
ঐতিহ্যবাহী এ সংগঠনের নেতৃত্বে
রয়েছেন সাইফুর রহমান সোহাগ ও এস এম
জাকির হোসাইন। সংগঠনের অনেক
নেতাকর্মী কিছু বির্তক ঘটনার জন্ম
দিলেও বির্তক এড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছে
ছাত্রলীগ। বর্তমান নেতৃত্ব মনে করেন
একটি বৃহৎ সংগঠনের কিছু ত্রুটি থেকেই
যাবে। তবে বিতর্কিত কাজ কমানোর
লক্ষ্য নিয়েই বর্তমান নেতৃত্ব কাজ করছে।
৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনটি
উৎসবমুখর করতে এবার নেওয়া হয়েছে
নানা প্রস্তুতি। রাজধানীর বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আলোকসজ্জা করা হবে।
ব্যনার ফেস্টুনের সাথে থাকবে বিভিন্ন
দেয়ালচিত্র। ৪ থেকে ১১ জানুয়ারি
পার্যন্ত কর্মসূচি আছে কেন্দ্রীয় ছাত্র
সংসদের। সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক
দেলোয়ার শাহজাদা জনকণ্ঠকে বলেন,
প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর দিন সকাল সাড়ে
৬টায় কেন্দ্রীয়সহ সকল সাংগঠনিক
কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা
উত্তোলন করা হবে পরে ধানমণ্ডির ৩২
নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা
জানানো হবে। সকাল ৯টায় কার্জন হলে
কেক কাটা এবং দুপুর থেকে শুরু হবে
এবারের বিশেষ আকর্ষণ কনসার্ট।এছাড়াও
৬ তারিখে র্যা লীয় ৮ তারিখে রক্তদান
কমসূচি ৯ তারিখে শীতবস্ত্র বিতরন এবং
১১ তারিখে শিশুদের মাজে শিক্ষা
উপকরণ বিতরন করা হবে। সকল কাজ
সুসম্পন্ন করতে ১০টি উপ-কমিটিও করা
হয়েছে বলে জানান তিনি।
ছাত্রলীগের কোন্দল বা গোলমাল বিষয়ে
কষ্ট পেতেন বঙ্গবন্ধু নিজেও।জাতির
জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর
মহামূল্যবান গ্রন্থ 'কারাগারের
রোজনামচা' সে বিষয়ে উল্লেখও
করেছেন। ঐ সময় ছাত্রলীগের নির্বাচন
নিয়ে নিজেদের মধ্যে গোলমাল নিয়ে
বঙ্গবন্ধু লিখেছেন ‘তোমরা প্রতিষ্ঠানকে
রক্ষা করিও। ছাত্রলীগকে ভেঙে ফেলে
দিও না। সকলকে আমার সালাম দিও।
ঐতিহ্যবাহী এই ছাত্র প্রতিষ্ঠান আমি
গড়েছিলাম কয়েকজন নিঃস্বার্থ
ছাত্রকর্মী নিয়ে। প্রত্যেকটি
আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে এই
প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রভাষা বাংলার
আন্দোলন, রাজবন্দীদের মুক্তি আন্দোলন,
ব্যক্তি স্বাধীনতার আন্দোলন,
স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন ও ছাত্রদের
দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে বহু
জেল-জুলুম সহ্য করেছে এই কর্মীরা। পূর্ব
বাংলার ছয় দফার আন্দোলন ও আওয়ামী
লীগের পুরাভাগে থেকে আন্দোলন
চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এই প্রতিষ্ঠানের
মধ্যে গোলমাল হলে আমার বুকে খুব আঘাত
লাগে।’ (পৃষ্ঠা: ২১১, ১৮ মার্চ ১৯৬৭,
শনিবার)
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাত্রলীগের
বিভিন্ন অপর্কমে জড়ালেও এসবের
বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয়
নেতারা। খুন, ধর্ষণ বা অন্যান্য অপকর্মের
অভিযোগ উঠলে কাউকে সাময়িক বা
কাউকে স্থায়ীভাবেই বহিস্কার করা
হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করছেন,
শাস্তির বিষয়টি জোড়ালো থাকলে
অপরাধ করতে সাহস দেখায় না নেতা
কর্মীরা। তবে সবাই অপকর্মে জড়িয়ে
পরে সেটি নয় গুটি কয়েক ব্যক্তির জন্য
গোটা সংগঠন অনেক সময় প্রশ্নবিদ্ধ হয়
তাই অন্যায়কে প্রশয় দিতেক চাননা
কেন্দ্রীয় নেতারা।
ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাইফুর
রহমান সোহাগ জনকণ্ঠকে বলেন,
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এশিয়া মহাদেশের
সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন। ছাত্রলীগের
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমরা ইতিহাস-
ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্য তুলে ধরবো।
এবার নতুনভাবে কনসার্টে বিষয়টি
সংযুক্ত করেছি। আমরা আনন্দ উদযাপনের
পাশাপাশি বর্তমান সরকারের উন্নয়নের
বার্তাও দিতে চাই। যে সোনার
বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তারই সুযোগ্য
কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা তা
বাস্তবায়ন করছে সে বিষয়গুলো সাধারণ
শিক্ষার্থীসহ সবাইকে জানাতে চাই।
তিনি আরো বলেন, সংগঠনের ৭০তম
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী যেখানে জন্মের
প্রথম লগ্ন থেকেই ভাষার অধিকার,
শিক্ষার অধিকার, বাঙালির
স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, দুঃশাসনের
বিরুদ্ধে গণঅভ্যূত্থান, সর্বোপরি
স্বাধীনতা ও স্বধিকার আন্দোলনের ছয়
দশকের সবচেয়ে সফল সাহসী সারথি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।অনুষ্ঠান সফল
করতে নেতাকর্মীসহ সবার সহযোগগিতাও
প্রত্যাশা করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের বর্তমান সাধারণ
সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইন জনকণ্ঠকে
বলেন, এশিয়ার বৃত্ততম ছাত্র সংগঠনের
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে ইতোমধ্যেই
সবাইকে দায়িত্ব বন্টন করে দিয়েছি।
প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর বিভিন্ন আয়োজনের
মাধ্যমে বার্তা দিতে চাই নতুন
প্রজন্মকেও।আলোকসজ্জা, ব্যানার
ফেস্টুনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের বিভিন্ন
সময়ের ভূমিকা, আন্দোলন সংগ্রাম ও
সাফল্যগুলো তুলে ধরা হবে। দেশরত্ন শেখ
হাসিনার সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা
সবাইকে জানতে হবে। আমরা খাদ্যে
স্বয়ংসম্পূর্ণ, আমারা নিজস্ব অর্থায়নে
পদ্মা সেতু করছি, বিদ্যু উৎপাদনে সাফল্য
আমাদেরেই এসব শিক্ষার্থীসহ সবার
জানা প্রয়োজন। সেই সাথে বিভিন্ন সময়
ছাত্রলীগের সে সাফল্য ভূমিকা তাও
তুলে ধরা হবে।
ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী নিয়ে
আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে কথা বলেছেন
একাধিক সাবেক ছাত্র নেতা। কারো
কণ্ঠে ক্ষোভ কারো কন্ঠে ভালোবাসার
মিশ্রন থাকলেও ছাত্রলীগ করাটা গর্বের
বলেও জানান। একই সাথে সাবেক
একাধিক নেতা বলেন বর্তমান নেতৃত্ব
বেশ ভালোভাবে সংগঠন চালাচ্ছেন।
একই সাথে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সফলতাও
কামনা করেন। কোন প্রয়োজনে সাবেক
নেতাদের প্রয়োজন হলে সবসময়ই পাশে
থাকার প্রত্যয়ও জানিয়েছে কেউ কেউ।
ছাত্র রাজনীতির আতুরঘর খ্যাত ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মধুর ক্যান্টিনে
ঘুরে দেখা গেছে নেতা কর্মীদের মধ্যে
একটা উৎসাহ উদ্দিপনা কাজ করছে।
বিভিন্ন উপ কমিটির দায়িত্বপাপ্তরা
নিজ নিজ দায়িত্ব যথাভাবে সম্পন্ন
করতে বিভিন্ন পরামর্শমূলক আলোচনাও
হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠাবাষির্কী
নিয়ে উৎসব আমেজ কাজ করছে অন্যান্য
নেতা কর্মীদের মধ্যেও। গত বছরের
প্রতিষ্ঠাবাষির্কীর আয়োজন নিয়েও
নেতাকর্মীরা আলোচনা করছেন। গত
বছরের স্মৃতি আতরে এক নেতা বলেন, গত
বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের
বিভিন্ন ভবনের দেয়ালে আঁকা হয়েছিল
গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস- ‘চিত্রপটে
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’। এসব ছবিতে
ইতিহাস আর সমকালীন অর্জনগুলো তুলে
ধরার চেষ্টা হয়েছিল। এবার হয়তো আরো
ভালো কিছুই চিত্র আমরা দেখতে
পারবো। এদিকে ছাত্রলীগের
পুনর্মিলনীতে নগরবাসীকে দেওয়া কথা
রেখেছেন সংগঠনের নেতারা। জনগগনের
ভোগান্তি এড়াতে তারা ছুটির
দিনগুলোতে বড় ধরনের র্যালি করার কথা
জানিয়েছিলেন সেসময়। সে আলোকেই এ
বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালি দুদিন
পিছিয়ে শনিবার দেওয়া হয়। এমনিতেই
বৃহস্পতিবার যানজট বেশি থাকে তাই আর
র্যালি হলে জনগনের ভোগান্তি চরমে
পৌছাবে সে চিন্তা করে র্যা লি
পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে
জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ…আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।