আজ আখেরি মোনাজাতে শেষ
হচ্ছে বিশ্ব ইজতেমা
শাহজাহান শোভন, টঙ্গী
আজ রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে
শেষ হচ্ছে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। টঙ্গীতে
আয়োজিত এতদঞ্চলের সর্ববৃহৎ মুসলিম
মহাসমাবেশের দ্বিতীয় পর্বের আখেরি
মোনাজাত পরিচালনা করবেন বিশ্ব তবলিগ জামাতের
অন্যতম শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশ কাকরাইল মসজিদের
খতিব হাফেজ হযরত মাওলানা মোহাম্মদ
যোবায়ের।
শেষ পর্বের ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে
অংশ নিতে গতকাল সন্ধ্যা থেকেই ঢাকা,
গাজীপুরসহ আশপাশের জেলা থেকে মুসল্লিরা
ট্রেন, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, নৌকাযোগে ও হেঁটে
দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেন।
আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি
মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল ইজতেমা মাঠে
সরেজমিন দেখা যায়, ১৬৫ একর এলাকা বিস্তৃত ২
বর্গকিলোমিটারজুড়ে বাঁশ ও চটের শামিয়ানার নিচে
লাখ লাখ মুসল্লি নিজ নিজ খিত্তায় সুশৃঙ্খলভাবে
অবস্থান নিয়ে এবাদত-বন্দেগিতে মশগুল।
ইজতেমা ময়দানের শামিয়ানার নিচে ঠাঁই না পেয়ে
লাখ লাখ মুসল্লি ইজতেমা ময়দানের চারদিকে নিজস্ব
ব্যবস্থাপনায় তাঁবু ও প্লাস্টিকের কাগজের শামিয়ানা
টানিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন।
ইজতেমার ময়দানে বয়ানে বুজুর্গরা বলেন, হযরত
মুহম্মদের (স) উম্মতের জিম্মাদার হিসাবে দ্বীন
ও ইসলামের দাওয়াত সারা দুনিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার
কাজ করেছেন। তার উম্মত হিসেবে আমাদের
ইমানিয়াত, ইবাদত, মোয়ামেলাত ও আখলাক
অনুশীলনে জানমাল আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে
কিছু সময় দাওয়াত, তালিম, জিকির ও নামাজে মশগুল হওয়া
জরুরি। মুরব্বিদের দেওয়া এ বয়ান তাৎক্ষণিকভাবে
বাংলা, আরবি, ফার্সি, উর্দুসহ কয়েকটি ভাষায় তরজমা
করে মুসল্লিদের মাঝে শোনানো হচ্ছে।
বাদ ফজর গতকাল বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা
মোহাম্মদ হোসেন, বাদ জোহর মাওলানা শেখ
আহম্মদ ও বাদ আসর হাফেজ হযরত মাওলানা
মোহাম্মদ যোবায়ের। বয়ানে তবলিগের ৬ উসুল
যথাÑ কালেমা, নামাজ, ইলম, জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন,
সহি নিয়ত ও দাওয়াতে তবলিগ নিয়ে আলোচনা করা
হয়। বয়ানে বলা হয়, দ্বীনের দাওয়াত চালু হয়ে
গেলেই দুনিয়া ও আখেরাতে কামিয়াবি আসবে।
আমাদের জিন্দেগিতে সফলতা ও আখেরাতে
মুক্তি পেতে হলে বেশি বেশি আল্লাহর রাস্তায়
জানমাল কোরবান ও মেহনত করতে হবে। নিজে
দিনের রাস্তায় কাজ করতে হবে ও অপর ভাইকে
দ্বীনের রাস্তায় আসার অনুপ্রেরণা দিতে হবে।
তিন দিনের জামাত ও চল্লিশ দিনের জামাত তৈরি করতে
হবে।
মাওলানা সাদকে নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলন স্থগিত
তবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা সাদকে
ইজতেমা ময়দানে যেতে না দেওয়া নিয়ে তবলিগ
মুরব্বিদের মাঝে দুটি গ্রুপের যেসব ঘটনা ঘটে
তার ব্যাখ্যা দিতে শনিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে
ডাকা সংবাদ সম্মেলন গতকাল তাৎক্ষণিক স্থগিত করা
হয়। ইজতেমার শীর্ষ মুরব্বি মাহফুজুর রহমান সংবাদ
সম্মেলন বাতিল করার কথা জানান। ইজতেমা শুরুর ৩
তিন দিন আগ থেকে ইজতেমা নিয়ে যে অচলাবস্থা
দেখা দিয়েছিল এবং মাওলানা সাদ নিজ দেশ ভারতের
দিল্লিতে চলে যাওয়ার ঘটনায় দেশব্যাপী যেসব
আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছিল তা নিরসনের
লক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। তবলিগ
জামাতের নেতৃত্বে থাকা দিল্লির মারকাজ আমির
মাওলানা সাদ এবং দেওবন্দের শীর্ষ মুরব্বিদের
মাঝে সম্প্রতি যেসব দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল যার
প্রভাবে বাংলাদেশে তবলিগ জামাতের মধ্যে তৈরি
হয় বিভক্তি।
আইনশৃঙ্খলা জোরদার : আখেরি মোনাজাত
উপলক্ষে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসংলগ্ন এলাকায়
শনিবার রাত থেকে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে
জেলা পুলিশ। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ব
ইজতেমা ময়দানে পুলিশ কন্ট্রোল রুমসংলগ্ন মিডিয়া
সেন্টারের সামনে এক ব্রিফিংয়ে গাজীপুরের
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এ তথ্য
জানিয়েছেন।
পুলিশ সুপার বলেন, ইজতেমায় অংশ নেওয়া
মুসল্লিদের পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে
মুসল্লিরা আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে
আসবেন। এ কারণে মুসল্লিদের চাপ বেশি
থাকবে। মুসল্লিদের সুবিধার্থে শনিবার রাত ১২টা
থেকে ইজতেমা মাঠসংলগ্ন ঢাকার আবদুল্লাহপুর,
কামারপাড়া, গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস ও
মীরেরবাজ পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
মুসল্লিদের চলাচলের সুবিধার্থে ১৫টি শাটল বাস
তাদের আনা-নেওয়া করবে।
২ মুসল্লির মৃত্যু : ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে
যোগ দিতে আসা দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল সকালে ও শুক্রবার রাতে তাদের দুজনের
মৃত্যু হয়। টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল কন্ট্রোল
রুমের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক
চিত্তরঞ্জন দাস জানান, শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত
হয়ে মো. শহীদুল ইসলাম (৫৬) নামে এক মুসল্লি
মারা যান। তিনি ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকার
বাসিন্দা। শুক্রবার রাতে মোবারক হোসেন
মোহর (৬৫) নামে এক মুসল্লি মারা যান। তার বাড়ি
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলা এলাকায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ…আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।