আদালতে ৫ আসামির চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি
প্রকাশ :
গ্রেফতারকৃত বিমানের কো-পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) সাব্বির এনামসহ আসামিরা- ফাইল ছবি
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যাত্রীসহ বিমান হামলার পরিকল্পনা করে জঙ্গিরা। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিমানের কো-পাইলট (ফার্স্ট অফিসার) সাব্বির এনামকে বারবার প্রস্তাবও দেয়া হয়। তবে জঙ্গি নেতা আবদুল্লাহর ওই পরিকল্পনায় পাইলট সাব্বির সাড়া না দিলে তা ভেস্তে যায়।
শুধু তাই নয়, মিরপুরের শাহ আলী মাজার, গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার, আশুলিয়া বৌদ্ধ মন্দির, বিরুলিয়া হিন্দু এলাকা, দারুস সালাম পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন স্থানে একযোগে বোমা হামলার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গি নেতা আবদুল্লাহর। সে অনুযায়ী বোমা বানিয়ে পর্যাপ্ত মজুদও করা হয়েছিল আবদুল্লাহর ‘কোমলাপ্রভা’ বাড়িতে।
মিরপুর বর্ধনবাড়ী এলাকায় ‘কোমলাপ্রভা’ নামের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান মামলায় রোববার এক আসামিসহ সম্প্রতি ৫ আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে ওই ৫ আসামি এসব তথ্য উল্লেখ করেছেন।
রোববার রিমান্ড শেষে আসামি সৈয়দ নুরুল হুদা মাসুম আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। স্বীকারোক্তি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া এদিন অপর আসামি মো. মাজহারুল ইসলামকেও রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বুধবার বিমানের পাইলট সাব্বির এনাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, গুলশান হামলার অনেক আগ থেকেই জঙ্গি আবদুল্লাহ তাকে যাত্রীসহ বিমান নিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে’ হামলা করতে প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাব তাকে অনেকবার দিয়েছে আবদুল্লাহ। কিন্তু বারবারই তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর আসামি মো. বিল্লাল হোসেন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, গুলশান হামলার আগে বা পরে আবদুল্লাহ, সাব্বির ও সরোয়ার জাহান ফরহাদ পরিকল্পনা করে যে, সাব্বির বিমান নিয়ে ‘প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে’ নিয়ে ফেলবে বা বিমান যাত্রীসহ ‘সিরিয়ায় আইএসের ঘাঁটিতে’ নিয়ে যাবে। আবদুল্লাহর বাসায় প্রথমে জেএমবি নেতা সরোয়ার জাহান ফরহাদ আইএসের বয়াত নেয় ইন্টারনেটের মাধ্যমে আবদুল্লাহর কম্পিউটার থেকে। তখন সেখানে মারজান, সাগর, ফারদিনসহ আরও কয়েকজন ছিল। ফরহাদ পরে আবদুল্লাহ, সায়েম, আজাদের স্ত্রী, হযরত আলী, আসিফদের বয়াত দেয়। আবদুল্লাহর বাসায় মাহফুজ, হাতকাটা সোহেল, ফারুকসহ জেএমবির বিভিন্ন নেতা আসত।
জঙ্গি নেতা আবদুল্লাহ গত রমজানের আগে কোনো এক বৃহস্পতিবার সায়েম ও গোলাম রাব্বীকে শাহ আলীর মাজার রেকি করতে পাঠায়। তারা দু’জন রেকি করে আবদুল্লাহকে বিস্তারিত বলে। এরপর আশুলিয়ার বঙ্গবন্ধু রোডের বৌদ্ধ মন্দিরে রেকি করা হয়। ওই এলাকার বিরুলিয়া ব্রিজের কাছে এক হিন্দু এলাকা ও মন্দিরে রেকি করা হয়।
এছাড়া ট্রাক চালিয়ে পার্শ্ববর্তী এক এএসপির অফিস ভেঙে দেয়ার পরিকল্পনাও ছিল আবদুল্লাহর। গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারে ও পাশের পুলিশ বক্সে টাইম বোমা বিস্ফোরণের পরিকল্পনা ছিল আবদুল্লাহর। বর্ধনবাড়ীর পূর্বদিকে বাইতুল বাকি নামে মসজিদের বিপরীতে পুলিশ ফাঁড়িতেও বোমা হামলার লক্ষ্যে রেকি করা হয়।
৩১ অক্টোবর আসামি মো. হযরত আলী ওরফে বিপ্লব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আবদুল্লাহর সঙ্গে মুফতি হান্নানের যোগাযোগ ছিল। আবদুল্লাহ বিভিন্ন স্থানে হামলার পরিকল্পনা করত। শাহ আলী মাজার, দারুস সালাম পুলিশ ফাঁড়ি, আমুলিয়া বৌদ্ধ মন্দির, বিরুলিয়া হিন্দু এলাকা, গোলাপ শাহ মাজারে হামলার পরিকল্পনা ও রেকি করা হয়েছিল। একযোগে এসব স্থানে বোমা হামলার পকিল্পনা করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী বোমা বানিয়ে পর্যাপ্ত মজুদও করা হয়েছিল আবদুল্লার কোমলপ্রভা নামের বাড়িতে।
এছাড়া চলতি মাসেই আসামি আসিকুর রহমান আসিফ আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়ে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর রাতে মিরপুর মাজার রোডের বর্ধনবাড়ী এলাকায় ‘কোমলাপ্রভা’ নামের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র্যাবব। অভিযান চলার সময় ওই বাড়ির পঞ্চম তলায় জঙ্গি আস্তানায় ভয়াবহ রাসায়নিক বিস্ফোরণ হয়। অভিযানে জঙ্গি আবদুল্লাহ ও তার পরিবার আত্মসমর্পণের জন্য সময় নেয়। কিন্তু পরে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তারা মারা যায়।
এ মামলার অপর আসামি সুলতানা পারভিন ওই ‘কোমলাপ্রভা’ বাড়ির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদের স্ত্রী ও সাব্বিরের মা।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে দুই পুলিশসহ দেশি-বিদেশি ২২ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ডে’ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। নিহতদের সঙ্গে আবদুল্লাহর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ…আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।