তিন দিনের সফরে নম পেনে প্রধানমন্ত্রী
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,
তিন দিনের সরকারি সফরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় পৌঁছেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে দুটি চুক্তি ও নয়টি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার কথা রয়েছে।
রোববার সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে রওনা হয়ে কম্বোডিয়ার স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১২টার দিকে নম পেনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী।
নম পেন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানান কম্বোডিয়ার মহিলা বিষয়ক মন্ত্রী ইংকানথা ফাভি, দেশটির পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট সোফিয়া ইট, কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সমবর্তী দায়িত্বপ্রাপ্ত সাঈদা মুনা তাসনিম এবং বাংলাদেশে কম্বোডিয়ার অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত পিচকুন পানহা।
বিমানবন্দর থেকে মোটর শোভাযাত্রা করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে হোটেল সোফিটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। কম্বোডিয়া সফরে তিনি এ হোটেলেই থাকবেন।
প্রায় সাড়ে তিন বছর পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিতীয়বারের মত কম্বোডিয়ায় এলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের আমন্ত্রণে।
সফরকালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন। কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহামনির সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বিকালে নম পেনের স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন এবং গণহত্যা জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের রাজকীয় স্মৃতি মূর্তিতেও শ্রদ্ধা জানাবেন তিনি।
সফরের প্রথম দিনই কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দেওয়া এক নৈশভোজে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। কম্বোডিয়ায় বসবাসকারী বাংলাদেশিরাও ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সোমবার দুই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত আলোচনা ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকগুলো সই হওয়ার কথা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী আগেই জানিয়েছিলেন, বিমান চলাচল ও দুই দেশের শীর্ষ বাণিজ্যিক সংগঠনের মধ্যে সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবার।
এছাড়া নয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে, যার মধ্যে জয়েন্ট ট্রেড কাউন্সিল গঠন; ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা; শ্রম ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ খাতে সহযোগিতা; তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা; পর্যটন ক্ষেত্রে সহযোগিতা; যুদ্ধের ইতিহাস, স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণে সহযোগিতা; মৎস্য ও অ্যাকুয়াকালচার বিষয়ক সহযোগিতা এবং বিনিয়োগ প্রসারে সহযোগিতার মত বিষয় রয়েছে।
এছাড়া বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) এবং রয়্যাল অ্যাকাডেমি অব কম্বোডিয়ার (আরএসি) মধ্যে অ্যাকাডেমিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার সম্ভাবনার কথাও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন।
দুই প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে উভয় দেশের জাতির পিতার নামে ঢাকা ও নম পেনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণের ঘোষণা দেওয়া হবে। শেখ হাসিনা ও হুন সেন পরে যৌথ বিবৃতি দেবেন।
বারিধারা কূটনৈতিক এলাকার ‘পার্ক রোড’ রাস্তাটি কম্বোডিয়ার প্রয়াত রাজা নরোদম সিহানুকের নামে হবে। একইভাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে নম পেনের একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করবে কম্বোডিয়া সরকার।
কম্বোডিয়ার সিনেট প্রেসিডেন্ট সে চুহুম ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট হেং সেমারিনের সঙ্গেও পৃথকভাবে সাক্ষাৎ হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর।
বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন।
সফর শেষে মঙ্গলবার বিকালে শেখ হাসিনার ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
ধন্যবাদ…আপনার মূল্যবান মতামত প্রদানের জন্য।